বাঙালিদের দিয়ে হয় না এমন কাজ দুনিয়ায় নেই
যে বয়সে আমরা চাকরির জন্য সিভি ড্রপ করছি সেই বয়সে একজন চাইনিজ ছেলে বিমানের নকশা করছে। সে বয়সে-ই জাপানের একটা ছেলে গবেষণার জন্য যায় হার্ভার্ড বা এমআইটিতে, রাশিয়ার ছেলেটি যাচ্ছে গবেষণার জন্য অক্সফোর্ডে আর রুটির দোকানে চাকরি করে নিজের পড়াশোনার খরচ চালাচ্ছে। আমাদের পাশের দেশ ভারত তাঁরা এখন অনেক এগিয়ে গিয়েছে, অনেক নামকরা বড় বড় কোম্পানির সিইও যেনারা ভারতীয় নাগরিক।
অন্যদিকে দেশের বাইরের শিক্ষার্থীরা যখন পাল্লা দিচ্ছে কার কয়টা গবেষণাপত্র আছে, পাবলিকেশন আছে আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা তখন জিজ্ঞেস করে পাবলিকেশন কি? কীভাবে করে? অবশ্য এতে তাদের দোষ আমি দেখি না, কারণ আমাদের দেশের ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া যেভাবে হয় তাতে অনেক শিক্ষকেরাই পাবলিকেশন থাকে না। আসলে আমাদের দেশের ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয় রাজনৈতিক বিবেচনায় আর সিজিপিএ দেখে।
ভাবতে সত্যি-ই লজ্জা লাগে বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গর্ব যখন গবেষণা, নোভেল প্রাইজ তখন আমাদের দেশের শিক্ষকদের গর্ব ১০ টাকাতে তাদের ক্যাম্পাসে কি কি পাওয়া যায়, কিন্তু উনারা ভুলে গিয়েছেন একটা সময় প্রাচ্যর অক্সফোর্ড এর এখন অবস্থানটা কি।
দেশের বাইরের ইউনিভার্সিটিতে যখন গবেষণার প্রতিযোগিতা হচ্ছে, তখন আমরা ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক পা চাটার পাল্লা দেই, আর জুনিয়রদের র্যাগ দিয়ে নাকি আচরণ শেখায়। গ্রাজুয়েশন শেষে আমরা বসে বসে ইতিহাস, সাধারণ ঘ্যান ঘ্যান মুখস্থ করি একটা চাকরি পাওয়ার জন্য, আর অন্য দেশের শিক্ষার্থীরা নিজেরা ইতিহাস তৈরি করে। আমরা চাকরির পিছনে দৌড়ায় কারণ আমাদের সমাজের কাছে একটা সরকারি চাকরি মানেই হলো লাইফ সেটেল; আবার ঘুষ আর সুদের টাকাতে বাড়ি, গাড়ি করে নিজেকে সাকসেসফুল বলার মানুষ চারপাশে অভাব নেই।
আমি বিশ্বাস করি আমাদের দেশ অনেক এগিয়ে গিয়েছে আর এই ক্ষেত্রে সবথেকে বড় অবদান রেমিট্যান্স আর গার্মেন্টস শিল্পের, কিন্তু আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে একটা দেশের উন্নয়নের জন্য বিজ্ঞান চর্চা করতে হবে, প্রচুর গবেষণা করতে হবে। অন্য সব দেশের ইউনিভার্সিটিতে গবেষণা হয় আর আমরা তাদের গবেষণার প্রডাক্ট নিয়ে গর্ব করি আর বলি, “আমি ব্যান্ডের জিনিস ছাড়া ব্যবহার করি না” এই কথাটা বলার মাঝে আমাদের লজ্জা পাওয়া উচিত।
আমি মন থেকে বিশ্বাস করি একটা দিন পরিবর্তন আসবেই। আমাদের দেশ অনেক এগিয়ে যাবেই। ভারতের ১০০ কোটি জনগণ নিয়ে যদি এত উন্নতি করতে পারে আমাদের ১৬ কোটি জনগণ নিয়ে কেনো পারব না? ওদের যদি ১০০ জন ভালো জায়গাতে যেতে পারে তাহলে আমাদের ১৫ জন তো যেতে পারবে। বাঙালিদের দিয়ে হয় না এমন কাজ নেই এই দুনিয়ায়। শুধু একটা বার শুরু করা দরকার, কিন্তু তার আগে গোড়া থেকে ঠিক করতে হবে।