ভালো থেকো আব্বু

তোমাকে ছাড়া কেটে গেলো দেখতে দেখতে ৪ বছর, কিন্তু মনে হচ্ছে সহস্র বছর। এমন একটা দিন নেই যে তোমার কথা মনে পরেনি। তোমাকে ছাড়া একটা সময় যখন কিছুই চিন্তা করতে পারতাম না, এখন তোমাকে ছাড়া আমার সব কিছু চিন্তা করতে হয়।

আগে তুমি তোমার হাত ছাড়তে দিতে না আমি হারিয়ে যাবো এই ভয়ে, আর যখন তুমি নিজেই হাত ছেড়ে দিলে তখনই আমরা কতটা দূরে। সেই যে হাত ছেড়ে চলে গেলে আর একটা বার আঙুল পর্যন্ত স্পর্শ করার সুযোগ পেলাম না।

আজকের দিনে যখন তুমি আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছিলে সেদিন এক ফোঁটা অশ্রু-ও আমি ফেলিনি। অনেক শক্ত হয়েছিলাম শুধু আম্মু আর নিশির দিকে তাকিয়ে। জানো আব্বু কান্না চেপে রাখা যে কত কষ্টের আমি সেদিন ঠিক বুঝতে পেরেছিলাম, হারে হারে বুঝতে পেরেছিলাম; সত্যি-ই বুঝতে পেরেছিলাম।

তোমার নিথর দেহ যখন নিচে পরেছিল বুক ফেটে যাচ্ছিলো আমার, খুবই ইচ্ছা করছিল তোমাকে জড়িয়ে ধরে থাকি, পারিনি। তোমার মৃত মুখটার সৌন্দর্য একটু বেশি-ই ছিল, বারবার দেখছিলাম তবুও দেখার শখ মিটছিল না। আহ্! সেদিনই ছিল শেষ দেখা।

তুমি চলে যেতে থাকলে একটু একটু করে দূরে। যখন শেষ মাটিটুকু দিচ্ছিলাম তখন মনে হচ্ছিল একটি বার হয়ত বলবে আমি মারা যায়নি, খুবই চাচ্ছিলাম সব কিছু মিথ্যা হয়ে যাক; এইটা একটা দুঃস্বপ্ন হোক, তা আর হলো না।

তুমি চলে যাবার অনেক দিন হলেও বোকার মত আজও তাকিয়ে থাকি কখন তুমি আবার আসবে, জানি আসবে না কোনোদিন আর তবুও প্রতিদিন তাকিয়ে থাকি দরজার দিকে এই বুঝি আসবে; সত্যি-ই বলছি মোবাইলের দিকে এখনো তাকিয়ে থাকি এই বুঝি কল দেবে আর জিজ্ঞেস করবে কেমন আছি, পড়াশোনা কেমন চলছে, বাড়িতে কবে আসবো।

সর্বশেষ এইটাই বলবো যে, আমাকে ক্ষমা করে দিও সব কিছুর জন্য। আর হুম, আমাদের নিয়ে চিন্তা করো না, আমরা ভালো আছি। তুমি শুধু নিজের যত্ন নিও। তবে, একটা আফসোস সারাজীবন থাকবে তোমাকে আর পাঞ্জাবিটা কিনে দেওয়া হলো না।

আমার দেখা সর্বশ্রেষ্ঠ বাবা তুমি যা ভেবে আমার গর্বের শেষ নেই, আমি সত্যি-ই ভাগ্যবান কারণ আমি তোমার সন্তান হতে পেরেছি। তুমি আমাকে খুবই ভালোবাসতে, যদিও আমি তোমার মত এত ভালোবাসতে পারবো না তবে আমি-ও যে অনেক ভালোবাসি, সব সময় তোমার শূন্যতা অনুভব করি আব্বু। তোমাকে ছাড়া এখন আমার জীবনের নৌকা একাই চালাতে হয়।

যায় হোক-

ভালো থেকো আব্বু, নিশ্চই দেখা হবে কোন একদিন। সেদিন আমি চাই হাসতে হাসতে তোমার কাছে আসতে, বুকে জড়িয়ে আবার নেবে তো আব্বু?