Header Ads

Header ADS

চায়না তে স্কলারশিপ, এজেন্ট হতে সতর্কতা





বর্তমান আমাদের দেশের প্রচুর ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা করার জন্য চায়না তে আসছে, আর আসবেই না কেন বলেন এশিয়ার শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশীরভাগ তো এখন চায়না তে অবস্থিত। আমি নিজে দেখেছি বেশীরভাগ ছাত্র-ছাত্রী চায়না তে কিভাবে ফুল স্কলারশিপ এর জন্য আবেদন করতে হয় এই বিষয়ে না জানার জন্য চায়না তে আসে এজেন্টদের মাধ্যমে। আর এই সুযোগে আমাদের দেশের এজেন্টরা লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে, দেশের বাইরে স্টুডেন্ট পাঠানো একটা লাভজনক ব্যবসা হয়েছে, তাই আমাদের দেশে ব্যাঙের ছাতার মত বেড়ে উঠছে নতুন নতুন এজেন্ট। আমি রিয়াদ; ফুল স্কলারশিপ নিয়ে বর্তমানে হুবেই ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্স করছি ফিন্যান্স-এ, আজ বলব এজেন্ট ছাড়া সত্যি-ই স্কলারশিপ পাওয়া যায় কিনা এই বিষয়ে।

আমি নিজে কোন এজেন্ট কে টাকা দেইনি, এজেন্টের মাধ্যমে আসিনি, তবে ৭/৮ টা এজেন্টের সাথে কথা বলে ছিলাম কারন আমারও এই ভুল ধারনাটা ছিল; আর প্রচারে হয় প্রসার, এজেন্টরা এই কাজ খুব-ই সাফল্যর সাথে করতে পেরেছে। যায় হোক, আমার বড় ভাই চায়না ইউনিভার্সিটি অফ জিয়োসাইন্স (উহান)-এ পিএইচডি করছেন, উনি আমাকে যথেষ্ট সাহায্য করেছিলেন, তাই এজেন্ট ছাড়া ফুল স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে আসার সুযোগ পেয়েছি। আমাদের দেশের এজেন্টরা সাধারণত একটা কথা বলেন যে এজেন্ট ছাড়া ফুল/পার্শিয়াল স্কলারশিপ পাওয়া যায়-ই না, আমার মতে যা পুরো মিথ্যা কথা, আর বানোয়াট। এজেন্ট ছাড়া আপনি-ও ফুল স্কলারশিপ পাবেন যদি নিজেই ঘরে বসে এপ্লাই করেন, আর আপনার যদি স্কলারশিপ পাবার মত যোগ্যতা থাকে।

আপনি এপ্লাই করবেন, এজেন্টরা-ও এপ্লাই করবে, কিন্তু স্কলারশিপ দেবে সিএসসি (চায়না স্কলারশিপ কাউন্সিল)। সিএসসি কাকে স্কলারশিপ দেবে সেইটা তাদের ইচ্ছা, ইউনিভার্সিটি গুলোর এই বিষয়ে কিছু করার থাকে না, তাহলে নিজে ভাবুন চায়নীজ ইউনিভার্সিটির যদি কিছু না করার থাকে তাহলে আমাদের দেশের এজেন্টরা এত ক্ষমতা পায় কিভাবে? এখন অনেকেই বলবে যে টিচাররা তো এক্সেপ্টেন্স লেটার দেয় সেইটা দিয়ে কি স্কলারশিপ পাওয়া যাবে না? এই প্রশ্নের উত্তরতা একটু অন্যভাবে দেই, আমার এক্সেপ্টেন্স লেটার ছিলনা, আর সিএসসি এর মতে ৫০% এর বেশি স্টুডেন্ট স্কলারশিপ পায় যাদের এক্সেপ্টেন্স লেটার থাকে না। তবে হ্যাঁ, শুধু পিএইচডি করার জন্য লাগবে এইটা। আর এইটা ম্যানেজ করা আহামরি কিছু না।

আমি বলছিলাম এজেন্ট নিয়ে, আপনি যদি এই এজেন্টদের কাছে যান তাহলে আপনাকে মাথায় রাখতে হবে যদি আপনি ফুল বা পার্শিয়াল স্কলারশিপ পেয়ে যান তাহলে আপনাকে ১-১.৫ লাখ টাকা ওদের দিতে হবে। এজেন্টদের টাকা নেওয়ার কিছু পদ্ধতি আছে, যেমন আপনাকে বলবে ১ লাখ টাকার উপর এক টাকাও নেব না আমরা, কিন্তু যদি স্কলারশিপ পেয়ে যান তাহলে বলবে ভিসার কাগজ আটকে আছে ২০,০০০ দেন, এডমিশন লেটার নিয়ে আসতে হবে টাকা দেন আরও ২০,০০০; এমন অবস্থায় আপনি টাকা দিতে বাধ্য। কিছু কিছু এজেন্ট আছে যারা স্কলারশিপ হয়নি তবুও মিথ্যা বলে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে, সেই ছেলে/মেয়ে ইউনিভার্সিটিতে এসে যখন শুনতে পায় তার কোন স্কলারশিপ হয়নি বা পার্শিয়াল স্কলারশিপ পেয়েছে তাহলে তখন তার আর কিছু করার থাকে না। কল দেয় এজেন্টের কাছে, এজেন্ট কল ধরে না, পরে সেই এজেন্টের হদিসও পাওয়া যায় না আর।

তবে এজেন্টদের মাধ্যমে কাজ করলে একটা সুবিধা আছে এপ্লিকেশন টা তারা করে দেবে, তবে এই কাজ টা যদি আপনি ঘরে বসে করেন তাহলে আপনার ১-১.৫ লাখ টাকা বাঁচাতে পারবেন। সার্টিফিকেট, মার্কশিট, ভালো রেজাল্ট, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, পাসপোর্ট, ছবি সহ সব কিছু আপনার, এমনকি এমব্যাসিতে আপনাকেই দাঁড়াতে হবে, এজেন্টরা শুধু এপ্লাই করে দিচ্ছে; এখন আপনি-ই ভাবুন কিভাবে এপ্লাই করতে হয় তা আপনি জানেন না, শুধু এই একটা কারনে আপনি আসলেই কোন টাকা দিতে চান কিনা।

এমব্যাসিতে যখন দাড়িয়ে ছিলাম তখন শুনেছি অনেকে লাখ লাখ টাকা দিয়েছে, তখন যা বুঝেছিলাম এক একজনের এক এক রকম গল্প হলেও সারাংশ কিন্তু এক। এমব্যাসিতে আমাকে কেউ জিজ্ঞেস করলে যখন বলতাম যে আমি কোন এজেন্ট দিয়ে আসিনি, আমার কোন টাকা লাগেনি বরং আমি-ই প্রতি মাসে টাকা পাবো তখন তাদের মুখ টা ফ্যাকাশে হয়ে যেত। এই ফ্যাকাশে মুখটা দেখতে আমার ভাল লাগেনি, তাই ভেবে ছিলাম এইটা নিয়ে কিছু লিখব কিন্তু প্রচুর ব্যস্ততার জন্য এতদিন লিখতে পারিনি।

এই লেখার পিছনে আমার উদ্দেশ্য একটা, এজেন্ট ছাড়াও ফুল স্কলারশিপ পাওয়া যায় চায়না তে এইটা বোঝানো। আর আমার চারপাশে অনেক মুখ আছে যাদের কেউ-ই এজেন্টের মাধ্যমে আসেনি। তাহলে এখন প্রশ্ন আসে কিভাবে এপ্লাই করব আমিতো জানিনা। উত্তর একদম সহজ, আমাদের গুগল মামা আছে, ইউটিউব আছে ফেসবুকে কিছু গ্রুপ-ও আছে, শুধু আপনার কষ্ট করে সার্চ দেওয়া দরকার, কিভাবে এপ্লাই করতে হবে তা আপনাকে বোঝানোর জন্য অনেকেই বসে আছে। তাও যদি না বোঝেন তাহলে আপনার সিনিয়র কোন ভাইকে জিজ্ঞেস করুন যিনি চায়না তে আছেন; আর তাও কিছু না বুঝলে আমার ইনবক্স খোলা আছে আপনার জন্য, ব্যস্ততার জন্য উত্তর দিতে বিলম্ব হতে পারে কিন্তু উত্তর পাবেন-ই।

শেষ করার আগে বলব, এজেন্টের মাধ্যমে করলে আপনার স্কলারশিপের সম্ভাবনা যতটা, আপনি নিজে করলে-ও স্কলারশিপের সম্ভাবনা ততটা-ই। আপনি আসলে স্কলারশিপ পাবেন কিনা এইটা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে সিএসসির উপর, আপনার, আমার, ইউনিভার্সিটি, বা অন্য কার-ও কোন হাত নেই। পার্থক্য তাহলে ১-১.৫ লক্ষ টাকা আর কিছুটা হয়রানি এর বেশি কিছু না, এখন ভাবুন কি করবেন। ধন্যবাদ আপনাকে আমার এত বড় লেখা পড়ার জন্য; হুম, কি করবেন সেই সিদ্ধান্ত একান্ত-ই আপনার।

আপনার যদি আরও কোন তথ্য লাগে, বা আমার সাহায্য লাগে তাহলে আমাকে এসএমএস দিতে পারেন; আবারও ধন্যবাদ আপনাকে।
[বি দ্রঃ বাংলা বানানে আমার যথেষ্ট দূর্বলতা আছে, ক্ষমা করবেন এই জন্য।

রিয়াদ হাসান
হুবেই ইউনিভার্সিটি, চায়না।


Powered by Blogger.